কোষ বিভাজন

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - জীববিজ্ঞান - | NCTB BOOK
1

এককোষী জীব থেকে শুরু করে বহুকোষী জীব পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই নানা ধরনের কোষ বিভাজন দেখা যায়। এগুলোর কোনোটি দেহবৃদ্ধি ঘটায়, কোনোটি জননকোষ সৃষ্টি করে, আবার কোনোটি দ্বিবিভাজন পদ্ধতিতে সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এই বিভিন্ন ধরনের কোষ বিভাজন কীভাবে হয়ে থাকে, এ সম্পর্কে আমরা এ অধ্যায়ে জানার চেষ্টা করব।

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

  • কোষ বিভাজনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ বর্ণনা করতে পারব।
  • মাইটোসিস ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • মাইটোসিসের পর্যায়সমূহ বর্ণনা করতে পারব।
  • জীবদেহে মাইটোসিস কোষ বিভাজনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পাৱৰ ।
  • মিয়োসিস ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • জননকোষ উৎপাদনে মিরোসিসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • জীবনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কোষ বিভাজনের অবদান উপলব্ধি করতে পারব।
Content added By
Content updated By

3.1 কোষ বিভাজন এবং তার প্রকারভেদ (Cell Division and its Classifications)

0

প্রতিটি জীবদেহ কোষ দিয়ে তৈরি। একটিমাত্র কোষ দিয়ে প্রতিটি জীবের জীবন শুরু হয়। বিভাজনের মাধ্যমে কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি জীবদেহের একটি স্বাভাবিক এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কোনো কোনো জীবের দেহ একটিমাত্র কোষ দিয়ে গঠিত, এদের বলা হয় এককোষী (unicellular) জীব, যেমন ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা, প্লাজমোডিয়াম ইত্যাদি। এককোষী জীব বিভাজনের মাধ্যমেই একটি থেকে অসংখ্য এককোষী জীব উৎপন্ন করে। আবার অনেক জীব একাধিক কোষ দিয়ে গঠিত। এদের বলা হয় বহুকোষী (multicellular) জীব। মানুষ, বট গাছ, তিমি মাছ ইত্যাদি জীব কোটি কোটি কোষ দিয়ে গঠিত। বিশালদেহী একটি বট গাছের সূচনাও ঘটে একটি মাত্র কোষ (জাইগোট বা নিষিক্ত ডিম্বাণু) থেকে। এককোষী নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একসময় কোটি কোটি কোষের একটি পরিণত মানুষের সৃষ্টি হয়। আবার কোষ বিভাজনের মাধ্যমেই পুং ও স্ত্রী গ্যামেট সৃষ্টি হয়ে নতুন প্রজন্মের জন্ম হয়। জীবের বৃদ্ধি ও প্রজননের উদ্দেশ্যে কোষ বিভাজনের (cell division) মাধ্যমে কোষের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে থাকে।

 জীবদেহের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া হচ্ছে, মাইটোসিস (Mitosis) এবং মিয়োসিস (Meiosis)।

Content added By
Content updated By

3.2 মাইটোসিস (Mitosis)

0

এই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় প্রকৃত বা সুকেন্দ্রিক কোষ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষে পরিণত হয়। মাইটোসিসে নিউক্লিয়াস প্রায় সমানভাবে একবার বিভাজিত হয়। নিউক্লিয়াসের প্রতিটি ক্রোমোজোমও একবার করে বিভাজিত হয়। সাইটোপ্লাজমও একবারই বিভাজিত হয়। তাই মাইটোসিস বিভাজনে কোষের মাতৃকোষ এবং অপত্য কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা, তথা DNA-এর পরিমাণ সমান থাকে। শুধু যে পরিমাণে একই থাকে তা নয়, মাতৃকোষের DNA-এর প্রায় হুবহু অনুলিপি অপত্য কোষে পাওয়া যায়। একে সমীকরণিক বিভাজনও বলে। এই বিভাজন প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত জীবের দেহকোষে (somatic cell) হয়ে থাকে এবং বিভাজনের ফলে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণী ও উদ্ভিদ দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে বৃদ্ধি পায়। প্রাণীর দেহকোষে এবং উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের ভাজক টিস্যু, যেমন: কাণ্ড ও মূলের অগ্রভাগ, ভ্রূণমুকুল এবং ভ্রূণমূল, বর্ধনশীল পাতা, মুকুল ইত্যাদিতে মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজন হয়। নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ এবং প্রাণীর অযৌন জননের সময়ও এ ধরনের বিভাজন হয়।

3.2.1 মাইটোসিসের পর্যায়সমূহ

মাইটোসিস কোষ বিভাজন একটি অবিচ্ছিন্ন বা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই বিভাজনে প্রথমে ক্যারিওকাইনেসিস অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে এবং পরবর্তীকালে সাইটোকাইনেসিস অর্থাৎ সাইটোপ্লাজমের বিভাজন ঘটে। বিভাজন শুরুর আগে কোষের নিউক্লিয়াসে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ হয়। এ অবস্থাকে ইন্টারফেজ পর্যায় বলে। বর্ণনার সুবিধার জন্য মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন প্রক্রিয়াকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাপ করা হয়ে থাকে, পর্যায়গুলো হচ্ছে, প্রোফেজ, প্রো-মেটাফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলোফেজ ।

(a) প্রোফেজ (Prophase)

এটি মাইটোসিসের প্রথম পর্যায়। এ পর্যায়ে কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয় এবং ক্রোমোজোমগুলো আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে মোটা এবং খাটো হতে শুরু করে। ক্রোমোজোমের এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে পূর্বে পানি বিয়োজনকে বিবেচনা করা হতো, তবে আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে ব্যাপারটি পানির সাথে সম্পর্কহীন অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে তখন এদের দেখা সম্ভব হয়। এ পর্যায়ে প্রতিটি ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার ব্যতীত লম্বালম্বি দুভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি ক্রোমাটিড উৎপন্ন করে। ক্রোমোজোমগুলো কুণ্ডলিত অবস্থায় থাকায় এদের সংখ্যা গণনা করা যায় না ।

(b) প্রো-মেটাফেজ (Pro-metaphase)

এ পর্যায়ের একেবারে প্রথম দিকে উদ্ভিদকোষে কতগুলো তন্তুময় প্রোটিনের সমন্বয়ে দুই মেরু বিশিষ্ট স্পিন্ডল যন্ত্রের (spindle apparatus) সৃষ্টি হয়। স্পিন্ডল যন্ত্রের দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানকে ইকুয়েটর বা বিষুবীয় অঞ্চল বলা হয়। কোষকংকালের মাইক্রোটিবিউল দিয়ে তৈরি স্পিন্ডলযন্ত্রের এক মেরু থেকে অপর মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত, এদেরকে স্পিন্ডল তন্তু (spindle fibre) বলা হয়। এ পর্যায়ে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার স্পিন্ডলযন্ত্রের কিছু নির্দিষ্ট তন্তুর সাথে সংযুক্ত হয়। এই তন্তুগুলোকে আকর্ষণ তন্তু (traction fibre) বলা হয়। ক্রোমোজোমের সাথে এই তন্তুগুলি সংযুক্ত বলে এদের ক্রোমোসোমাল তন্তুও বলা হয়। ক্রোমোজোমগুলো এ সময়ে বিষুবীয় অঞ্চলে বিন্যস্ত হতে থাকে। কোষের নিউক্লিয়াসের নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি ঘটতে থাকে। প্রাণিকোষে শিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টি ছাড়াও পূর্বে বিভক্ত সেন্ট্রিওল দুটি দুই মেরুতে অবস্থান করে এবং সেন্ট্রিওল দুটির চারদিক থেকে রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়। একে অ্যাস্টার-রে বলে।

(c) মেটাফেজ (Metaphase)

এ পর্যায়ের প্রথমেই সব ক্রোমোজোম স্পিন্ডল যন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চলে দুই মেরুর মধ্যখানে) অবস্থান করে। প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার বিষুবীয় অঞ্চলে এবং বাহু দুটি মেরুমুখী হয়ে অবস্থান করে। এ পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলো সর্বাধিক মোটা এবং খাটো হয়। প্রতিটি ক্রোমোজের ক্রোমাটিড দুটি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। এ পর্যায়ের শেষ দিকে সেন্ট্রোমিয়ারের বিভাজন শুরু হয় । নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিওলাসের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে।

(d) অ্যানাফেজ (Anaphase)

প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার দুভাগে বিভ হয়ে যায়, ফলে ক্রোমোটিড দুটি আলাদা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় প্রতিটি ক্রোমোটিডকে অপত্য ক্রোমোজোম বলে এবং এতে একটি করে সেন্ট্রোমিয়ার থাকে। অপত্য ক্রোমোজোমগুলো বিষুবীয় অঞ্চল থেকে পরস্পর বিপরীত মেরুর দিকে সরে যেতে থাকে। অর্থাৎ ক্রোমোজোমগুলোর অর্ধেক এক মেরুর দিকে এবং বাকি অর্ধেক অন্য মেরুর দিকে

 অগ্রসর হতে থাকে। অগত্য ক্রোমোজোমের মেরু অভিমুখী চলনে সেন্ট্রোমিয়ার অগ্রগামী থাকে এবং বাহুদ্বয় অনুগামী হয়। সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমোজোমগুলো V, L, J বা I-এর মতো আকার ধারণ করে। এদেরকে যথাক্রমে যেটাসেট্রিক, সাবমেটাসেন্ট্রিক, অ্যাক্রোসেন্ট্রিক বা টেলোসেন্ট্রিক বলে। অ্যানাফেজ পর্যায়ের শেষের দিকে অপত্য ক্রোমোজোমগুলো স্পিন্ডলযন্ত্রের মেরুপ্রান্তে অবস্থান নেয় এবং ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।

(e) টেলোফেজ (Telophase)

এটি মাইটোসিসের শেষ পর্যায়। এখানে প্রোফেজের ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে বিপরীতভাবে ঘটে। ক্রোমোজোমগুলো আবার সরু ও লম্বা আকার ধারণ করতে থাকে। এর কারণ হিসেবে পূর্বে পানি যোজনকে বিবেচনা করা হতো তবে আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া যা ক্রোমোজমের পানির পরিমাণের উপর নির্ভরশীল নয়। অবশেষে এরা জড়িয়ে গিয়ে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম গঠন

 করে। নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে। নিউক্লিয়ার রেটিকুলামকে ঘিরে পুনরায় নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের সৃষ্টি হয়, ফলে দুই মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। স্পিন্ডলযন্ত্রের কাঠামো ভেঙে পড়ে এবং ভগুলো ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়। টেলোফেজ পর্যায়ের শেষে বিষুবীয় তলে এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার ক্ষুদ্র অংশগুলো জমা হয় এবং পরে এরা মিলিত হয়ে কোষপ্লেট গঠন করে। সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গাণুসমূহের সমবণ্টন ঘটে। ফলে দুটি অপত্য কোষ (daughter cell) সৃষ্টি হয়। প্রাণীর ক্ষেত্রে স্পিন্ডলযন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চল বরাবর কোষঝিল্লিটি গর্তের মতো ভিতরের দিকে ঢুকে যায় এবং এ গর্ত সবদিক থেকে ক্রমান্বয়ে গভীরতর হয়ে একত্রে মিলিত হয়, ফলে কোষটি দুভাগে ভাগ হয়ে পড়ে।

দলগত কাজ

কাজ : সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে বিভিন্ন ধরনের ক্রোমোজোমের মডেল নির্মাণ।

প্রয়োজনীয় উপকরণ : দড়ি বা সুতা, আর্ট পেপার, আঠা, স্কচটেপ, কাটার, সাইনপেন ইত্যাদি।

পদ্ধতি : প্রথমে আমরা তৈরি করব মেটাফেজ দশায় দৃশ্যমান ক্রোমোজোমের মডেল। একই দৈর্ঘ্যের দড়ি বা সুতার দুটি টুকরো নাও। এই টুকরা দুটো হলো একই ক্রোমোজোমের দৃটি সিস্টার ক্রোমাটিডের মডেল। এমনভাবে এদেরকে গিট দাও যাতে পিটটি উভয়ের দৈর্ঘ্যের মাঝখানে পড়ে। গিটটি হলো সেন্ট্রোমিয়ারের মডেল। ঠিকমতো মাঝখানে গিটটি দিতে পারলে যা পাওয়া যাবে তা হলো একটি মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোমের মডেল, যার সেন্ট্রোমিয়ার থেকে চারটি বাহু বের হয়ে আছে বলে মনে হয়। চার বাহুর দুটি হলো একটি ক্রোমাটিডের আর অপর দুটি অপর ক্রোমাটিডের। সবগুলো বাহুর দৈর্ঘ্য সমান। একইভাবে আরও দুই টুকরা সমান মাপের দড়ি বা সুতা নিয়ে মাঝখান থেকে একটু সরিয়ে গিঁট দিয়ে সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোমের মডেল তৈরি কর। প্রান্ডের খুব নিকটে গিঁট দিলে তৈরি হবে অ্যাক্রোসেট্রিক ক্রোমোজোমের মডেল। একদম প্রান্তে যদি গিঁট দেওয়া হয় তাহলে সেটা হবে টেলোসেট্রিক। এবার চার ধরনের ক্রোমোজোমের মডেল একটি আর্টপেপারে আঠা বা স্কচটেপ দিয়ে লাগাও। সাইনপেন দিয়ে কোনটি কী তা লেখ এবং অংশগুলো লেবেল কর। লেবেলে অবশ্যই মেটাফেজ কথাটি উল্লেখ করবে।

এবার একইভাবে এনাফেজ দশায় ক্রোমোজোম, অর্থাৎ ক্রোমাটিডগুলোকে কেমন দেখা যায় তার মডেল বানাতে হবে। এজন্য প্রথমে মেটাফেজ দশার ক্রোমোজোমের মডেল বানাও। মেটাসেন্ট্রিক, সাবমেটাসেন্ট্রিক, জ্যাক্রোসেন্ট্রিক এবং টেলোমেট্রিক - চারটিরই। এনাফেজ দশায় সেন্ট্রোমিয়ার বরাবর প্রতিটি ক্রোমোজোম এমনভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় যাতে একটি ভাগে কেবল একটি ক্রোমাটিড পড়ে। সাথে নিয়ে যায় সেন্ট্রোমিয়ারের সেই অর্ধেকটুকু যেটা তার অং এখানেও আমরা মেটাফেজ দশার একটি ক্রোমোজোমের মডেলকে পিট বরাবর কেটে দুই ভাগ করব, যাতে একটি ভাগে থাকে একটিই ক্রোমাটিড। তখন দেখা যাবে, মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম থেকে প্রাপ্ত ক্রোমাটিড দুটির প্রতিটিই দেখতে ইংরেজি v বর্ণের মতো যেহেতু তার সেন্ট্রোমিয়ার থাকে ক্রোমাটিডের ঠিক মাঝখানে। মাঝখান থেকে একটু পাশের দিকে থাকা সেন্ট্রোমিয়ারবিশিষ্ট সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম থেকে অনুরূপভাবে অর্ধেক করে কেটে আলাদা করা ক্রোমাটিডের চেহারা হবে ইংরেজি বর্ণের মতো। একইভাবে অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ও টেলোসেক্ট্রিক ক্রোমোজোম থেকে প্রাপ্ত ক্রোমাটিড হবে যথাক্রমে ইংরেজি ] এবং বর্ণের মতো। এবার চার ধরনের ক্রোমাটিডের মডেল একটি আর্টপেপারে আঠা বা স্কচটেপ দিয়ে লাগাও। সাইনপেন দিয়ে কোনটি কী তা দেখ এবং অংশগুলো লেবেল কর। লেবেলে অবশ্যই এনাকেজ কথাটি উল্লেখ করবে।

তারপর উত্তর আর্টপেপারে দেখানো মডেল শ্রেণিকক্ষে প্রদর্শন কর। কোন ধরনের ক্রোমোজোম বা ক্রোমাটিড মেটাফেজ বা এনাফেজ দশায় কেমন চেহারা নেয়, তার কারণ ব্যাখ্যা কর।

 

Content added By
Content updated By

মাইটোসিসের গুরুত্ব

0

জীবদেহে মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজনের কারণে প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজমের মধ্যকার আয়তন ও পরিমাণগত ভারসাম্য রক্ষিত হয়। এর ফলে বহুকোষী জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে। সব বহুকোষী জীবই জাইগোট নামক একটি কোষ থেকে জীবন শুরু করে। এই একটি কোষই বারবার মাইটোসিস বিভাজনের ফলে অসংখ্য কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে পূর্ণ জীবে পরিণত হয়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি, চারটি থেকে আটটি, এভাবে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে একটি কোষ থেকে সম্পূর্ণ একটি জীব (যেমন: মানুষ, প্রায় 30 ট্রিলিওন কোষ) গঠিত হতে বুঝি অনেক লম্বা সময় প্রয়োজন। কিন্তু সেটি সত্যি নয়। যদি বৃদ্ধির জন্য দরকারি পুষ্টির সরবরাহ অক্ষুণ্ণ থাকে, সবগুলো কোষই বিভাজনক্ষম হয় এবং প্রতিবার বিভাজনে যদি একদিন করে সময় লাগে বলে ধরে নিই, তবু মাত্র 40-50 দিনের মাথায় মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোষ তৈরি হয়ে যাবে। মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় তৈরি অপত্য কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা ও গুণাগুণ একই রকম থাকায় জীবের দেহের বৃদ্ধি সুশৃঙ্খলভাবে হতে পারে। মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে, মাইটোসিসের ফলে অঙ্গজ প্রজনন সাধিত হয় এবং জননকোষের সংখ্যাবৃদ্ধিতে মাইটোসিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্ষতস্থানে নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে জীবদেহের ক্ষতস্থান পূরণ করতে মাইটোসিস অপরিহার্য। কিছু কিছু জীবকোষ আছে যাদের আয়ুষ্কাল নির্দিষ্ট। এসব কোষ বিনষ্ট হলে মাইটোসিসের মাধ্যমে এদের পূরণ ঘটে। মাইটোসিসের ফলে একই ধরনের কোষের উৎপত্তি হওয়ায় জীবজগতের গুণগত বৈশিষ্ট্যের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তবে অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস টিউমার এমনকি ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ হতে পারে।

টিউমার, ক্যান্সার এ শব্দগুলোর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এগুলো অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের ফল। মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি এভাবে কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত থাকে। কোনো কারণে এই নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে গেলে অস্বাভাবিকভাবে কোষ বিভাজন চলতে থাকে। এর ফলে টিউমার সৃষ্টি হয় এবং প্রাণঘাতী টিউমারকে ক্যান্সার বলে।

ক্যান্সার কোষ এই নিয়ন্ত্রণহীন অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনেরই ফল। গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু, রাসায়নিক পদার্থ কিংবা তেজস্ক্রিয়তা ক্যান্সার কোষ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। সহস্রাধিক জিনকে ক্যান্সার কোষ তৈরিতে সহায়ক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। উদাহরণ দেওয়ার জন্যে বলা যায়, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের E6 এবং E7 নামের দুটি জিন এমন কিছু প্রোটিন সৃষ্টি করে, যা কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রক প্রোটিন অণুসমূহকে স্থানচ্যুত করে। এর ফলে কোষ বিভাজনের নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে যায় এবং সৃষ্টি হয় জরায়ুমুখের টিউমার। অনেক সময় এ দুটি জিন পোষক কোষের জিনের সাথে একীভূত হয়ে যায় এবং কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী প্রোটিন অণুগুলোর কাজ বন্ধ করে দেয়। সৃষ্টি হয় ক্যান্সার কোষ, কিংবা ক্যান্সার। অনেক ধরনের ক্যান্সার রয়েছে এবং সেগুলো সবই কমবেশি মারাত্মক রোগ। লিভার, ফুসফুস, মস্তিক্ষ, স্তন, ত্বক, কোলন এবং জরায়ু, অর্থাৎ দেহের প্রার সকল অঙ্গেই ক্যান্সার হতে পারে।

দলগত কাজ
কাজ: শিক্ষক কয়েকজন করে শিক্ষার্থী নিয়ে দল গঠন করবেন এবং এক এক দলকে মাইটোসিস কোষ বিভাজনের এক একটি পর্যায়ের চিত্র অঙ্কন করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করতে বলবেন।

 

Content added || updated By

3.3 মিয়োসিস (Meiosis)

0

মিয়োসিস বিভাজনের এক চক্রে নিউক্লিয়াস দুবার বিভাজিত হয়। প্রথমবারে নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম সংখ্যায় অর্ধেক হয়ে যায়। এই বিভাজনে মাতৃকোষের যে দুটি নিউক্লিয়াস পাওয়া যায়, দ্বিতীয়বারে তার প্রতিটিই আবার দুটি কোষে বিভাজিত হয়। এবার অবশ্য ক্রোমোজোমের সংখ্যা এবং পরিমাণ সমান থাকে। তাই সব মিলিয়ে চূড়ান্ত ফল হলো, মিয়োসিস বিভাজনে একটি মাতৃকোষ থেকে চারটি অপত্য কোষ পাওয়া যায়, যেগুলোর প্রতিটিই মাতৃকোষের অর্ধেকসংখ্যক ক্রোমোজোম ধারণ করে (কাজেই DNA-এর পরিমাণও হয় প্রায় অর্ধেক)। তাই মিয়োসিসের আরেক নাম হ্রাসমূলক বিভাজন। 

প্রশ্ন হচ্ছে মিয়োসিস কেন হয়? মাইটোসিস কোষ বিভাজনে অপত্য কোষগুলোর ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান থাকে। বৃদ্ধি এবং অযৌন জননের জন্য মাইটোসিস কোষ বিভাজন অপরিহার্য। যৌন জননে পুং ও স্ত্রী জনন কোষের মিলনের প্রয়োজন হয়। যদি জনন কোষগুলোর ক্রোমোজোম সংখ্যা দেহকোষের সমান থেকে বার তা হলে জাইগোট কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা জীবটির দেহকোষের দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মনে কর, একটা জীবের দেহকোষে এবং জনন কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা চার (4)। পুং ও স্ত্রী জনন কোষের মিলনের ফলে সৃষ্ট জাইগোটে ক্রোমোজোম সংখ্যা দাঁড়াবে আট (৪) এবং নতুন জীবটির প্রতিটি কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা হবে আট, যা মাতৃজীবের কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার দ্বিগুণ। যদি প্রতিটি জীবের জীবনচক্র এভাবে চলতে থাকে তাহলে প্রতি চক্রে যৌন জননের ফলে ক্রোমোজোম সংখ্যা বারবার দ্বিগুণ হতে থাকবে। আমরা জানি, ক্রোমোজোম জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন বহন করে। কাজেই ক্রোমোজোম সংখ্যা দ্বিগুণ হতে থাকলে বংশধরদের মধ্যে আমুল পরিবর্তন ঘটে যাবে। যেহেতু পুং ও স্ত্রী জনন কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক, তাই জীবের যৌনজননে পুং ও স্ত্রী জনন কোষের মিলন হয়ে জাইগোটে পূর্ণসংখ্যক ক্রোমোজোম পাওয়া যায়। এভাবে জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা বংশপরম্পরায় একই থাকে। জনন কোষ সৃষ্টির সময় এবং নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদের জীবনচক্রের কোনো এক সময় যখন এ রকম ঘটে, তখন কোষের অর্ধেক ক্রোমোজোম সংখ্যার সে অবস্থাকে হ্যাপ্লয়েড (n) বলে। যখন দুটি হ্যাপ্লয়েড কোষের মিলন ঘটে, তখন সে অবস্থাকে ডিপ্লয়েড (2n) বলে। অর্থাৎ মিয়োসিস কোষ বিভাজন হয় বলেই প্রতিটি প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় টিকে থাকতে পারে।

মিয়োসিস প্রধানত জীবের জনন কোষ বা প্যামেট সৃষ্টির সময় জনন মাতৃকোষে ঘটে। সপুষ্পক উদ্ভিদের পরাগধানী ও ডিম্বকের মধ্যে এবং উন্নত প্রাণিদেহের শুক্রাশয়ে ও ডিম্বাশয়ের মধ্যে মিয়োসিস ঘটে। ছত্রাক, শৈবাল ও মসজাতীয় হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদের ডিপ্লয়েড মাতৃকোষ থেকে যখন হ্যাপ্লয়েড রেণু উৎপন্ন হয়, তখন জাইগোটে এ ধরনের বিভাজন ঘটে।

মিয়োসিস বিভাজনের সময় একটি কোষ পর পর দুবার বিভাজিত হয়। প্রথম বিভাজনকে প্রথম মিয়োটিক বিভাজন বা মিয়োসিস-1 এবং দ্বিতীয় বিভাজনকে দ্বিতীয় মিয়োটিক বিভাজন বা মিয়োসিস-2 বলা হয়। প্রথম বিভাজনের সময় অপত্য কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেকে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিভাজনটি মাইটোসিসের অনুরূপ, অর্থাৎ ক্রোমোজোম সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না।

 বাস্তবে মাঝে মাঝে হঠাৎ করে ক্রোমোজোমের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটতে পারে। যেমন: ব্যাঙের একটি প্রজাতি Xenopus tropicalis-এর সম্পূর্ণ ক্রোমোজোম সেট দ্বিগুণ হয়ে Xenopus laevis প্রজাতির উৎপত্তি ঘটেছে। প্ল্যান্টি রাজ্যের বিভিন্ন সদস্যের (যেমন: আলু) দেহকোষে (জননকোষে নয়) এই প্রক্রিয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অনেক সমর আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করার জন্য উদ্ভিদের এই জাত বেছে নিই, এমনকি সেরকম জান্ত পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করি, কারণ তা আকারে তুলনামূলকভাবে বড় হয়। এসব জাত খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে অধিকতর সহায়ক।

 ক্রোমোজোম বা জেনেটিক বস্তুর সমতা রক্ষা করা ছাড়াও জীনগত বৈচিত্র্য বজায় রাখা মিরোসিসের একইরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি অবদান। যৌন জনন করে এমন সকল জীবে মিয়োসিসের মাধ্যমে জিনের পুনর্বিন্যাস হয়ে জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি হরে থাকে। কোনো প্রজাতির টিকে থাকা বা না থাকা মূলত নির্ভর করে তার সদস্য জীবদের মধ্যে কতটা বৈচিত্ৰ্য আছে, তার উপর। পরিবেশ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। সেইসব প্রজাতি টিকে থাকে, যাদের অন্তত কিছু সদস্যের মধ্যে সেই পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যদি কোনো প্রজাতির জীবদের মধ্যে বৈচিত্র্য কম থাকে তাহলে নতুন কোনো পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর মতো বৈশিষ্ট্য কারোর মধ্যে থাকার সম্ভাবনাও হবে কম। ফলে হয়তো পুরো প্রজাতিটাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর যদি কোনো প্রজাতির জীবদের মধ্যে বৈচিত্র্য বেশি থাকে, তাহলে নতুন কোনো পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর মতো বৈশিষ্ট্য কারো না কারো মধ্যে থাকার সম্ভাবনাও হবে বেশি। তখন যদি বড় কোনো বিপদও আসে, তবু তার অন্তত কিছু সদস্য বেঁচে যাবে। তাই মিয়োসিস কোনো জীবের জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে প্রজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 

জীবের টিকে থাকার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দের বলেই মিয়োসিস বিভাজন বিবর্তিত হয়ে জীবজগতে নিজের স্থান করে নিয়েছে।

Content added By
Content updated By

অনুশীলনী

0
Please, contribute by adding content to অনুশীলনী.
Content
Promotion